শারীরিক ক্রটি নিয়ে যারা পৃথিবীর ইতিহাসের তারা
এই পৃথিবীতে নানা রঙের, নানা কর্মের লোক রয়েছে। স্রষ্টা আমাদের সকলকে সবকিছু দেননি। আমাদের মধ্যে অনেককে আছে যারা শারীরিক ভাবে অসুস্থ।কিন্তু মনের জোর খাটিয়ে ইতিহাসে উজ্জল নক্ষত্র হয়ে আছে যা হয়তো অনেকে সুস্থ থেকেও করতে পারে না। এদেরকে আমরা বলি শারীরিক প্রতিবন্ধী। অর্থাৎ এরা শারীরিক ভাবে সুস্থ নয়। কেউ জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী হয় কেউ রোগে অথবা দূর্ঘটনায় পড়ে।এদের প্রত্যেকের কাহিনী খুবই বেদনাদায়ক। কিন্তু এরা তাদের ক্ষমতা দিয়ে সারা বিশ্বকে কাপিয়ে দিয়েছে। চলুন তবে দেখে নেই এমন কিছু ব্যক্তিদের কাহিনী।
স্টিফেন হকিং: বিখ্যাত একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ছিলেন তিনি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হন তিনি।যখন তার বয়স ২১ বছর ছিল সে বয়সে তিনি অ্যামিওট্রফিক ল্যাটেরাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস)-এ আক্রান্ত হন। এর কারণে তিনি তার কথা বলার এবং চলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।
জন ন্যাস: জন ন্যাস নামক এক ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা গণিতবিদ ছিলেন তিনি। তিনি প্যারানয়েড স্রিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত হন। এই রোগ তার মস্তিষ্কের ওপর দৃঢ়ভাবে চাপ ফেলে ফলে এই রোগ চিন্তাশক্তি হারিয়ে ধ্বংস করে দেয়। কিন্তু এরপরও ন্যাস গণিত নিয়ে নতুন নতুন খোঁজ চালিয়ে যেতে থাকেন।জীবন তাকে ছোবল মারলেও তিনি থেমে থাকেন নি। ঝড়ের গতিতে এগিয়ে গেছেন। জ্যামিতি ও ক্যালকুলাসের আজও তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। চিরকাল থাকবেন।
ক্রিস্টি ব্রাউন: ক্রিস্টি নামের একজন বিখ্যাত আইরিশ লেখক সেরিব্রাল পালসিতে আক্রানন্ত হন কিন্তু এরপরও তিনি হেরে যাননি। বরং দ্রূত গতিতে তার কাজ করে গেছেন। দু’হাত অকেজো হয়েছিল তার তাই তিনি পা দিয়ে টাইপ করতেন। এবং টাইপ করে বইয়ের স্ক্রিপ্ট লিখতেন। বিখ্যাত এই ব্যক্তির আত্মজীবনী ‘মাই নলেফ্ট ফুট’ সারাবিশ্বের জন্য ব্যাপক সাড়া জাগানো একটি গ্রন্থ।
তার শারীরিক ক্রটি তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। ইচ্ছে শক্তি দিয়ে মানুষ সব করথে পারে।
ডেমোস্থিনিস: আথেন্স একজন বক্তা ছিলেন। এই বক্তার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৩৮৪-তে হয়েছিল। তার বক্তব্য শোনার জন্য এক লোকদের আগ্রহের কোন সীমা ছিল না। এমনকি তার বাণী শোনার জন্য মানুষজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতেন। তিনি সর্বদা অনুপ্রেরণার কথা বলতেন। কিন্তু মহান এই বক্তার একটিই ক্রটি ছিল সেটি হল তিনি তোতলা ছিলেন।কিন্তু সেই প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তিনি ইতিহাসে বুকে উজ্জল হয়ে আছেন। নিজেকে করেছেন তিনি বিখ্যাত।
ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ: ভিনসেন্ট বিশ্বখ্যাত চিত্রশিল্পী। মানসিক অবসাদের শিকার হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের প্রতিভাকে আটকে রাখেননি। একের পর এক ইতিহাস করে গেছেন। তার হাত থেকে করা এক একটি ছিল রত্ন চিত্র। হাত থাকতেও মানুষ এমন চিত্র করতে পারত না। ভাগ্য তাকে অকেজো করতে চেয়েও সফল হতে পারেনি।তিনি এগিয়ে চলেছেন নিজের তাগিদে। নিজের যোগ্যতার পৃথিবীকে জয় করতে পেরেছেন। অসম্ভবকে করেছেন সম্ভব।
ফ্রিডা কাহলো: ফ্রিডা একজন বিখ্যাত চিত্রকর ছিলেন। কিন্তু তিনি নিজের ছবি আঁকাতে অন্যতম সেরা ছিলেন। নিজের ছবি আঁকার মাঝেই তিনি প্রকৃত সুখ খুজে পেতেন।নিজেকে আঁকতেই তিনি বেশি ভালবাসতেন । কিন্তু ভাগ্য তাকেও ছাড়েনি মহান এ চিত্রশিল্পী পোলিও রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
জন মিল্টন:বিখ্যাত একজন লেখক ছিলেন জন মিল্টন।তিনি বিখ্যাত এই লেখক ছিলেন অন্ধ কবি। তিনি ১৬০৮ সালের ৯ ডিসেম্বর লন্ডনে জন্মগ্রহণ করে ছিলেন। কবিতাসও অনেক তিনি গদ্য লিখেছেন।১৬৭৪ সালের নভেম্বর মাসে তার মৃত্যু হয়। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত মিল্টনের গজীবন নিয়ে অনেক অনেক গবেষণা হয়েছে।
হেলেন কিলার:হেলেন কিলার ছিলেন একজন অন্ধ লেখিকা।একজন অন্ধ ও বোবা আর বধির হওয়া সত্ত্বেও তিনি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে চব্বিশ বছর বয়সে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে বি,এ পাস করেন। এরপরে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।তিনি জন্মগ্রহন করেন ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দে। কিন্তু তিনি জন্ম থেকেই এমন ছিলেন না। তিনি ১৯ মাস বয়সে জ্বরে আক্রান্ত হন।সেই জ্বরের থাবায় তিনি বধির এবং দৃষ্টিহীন হয়ে যান। মাত্র ছয় বছর বয়সে হেলেন কিলার টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহামবেলের মাধ্যমে বধিরদের জন্য বিশেষ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন এরপর সেখানে তিনি শিক্ষক অ্যান সুলিভানের সাহায্য সহযোগিতার কারণে তার লেখাপড়া শুরু করেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রেডক্লিফ থেকে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। তার আত্মজীবনী দ্যা স্টোরি অব মাই লাইফ প্রকাশিত হয় তার ডিগ্রি অর্জনের আগে। দ্যা ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন, আউট অব ডার্ক, মাই রিলিজিয়ন বইগুলো ছিল তার বিখ্যাত বই গুলোর মধ্যে সেরা এবং অন্যতম। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বখ্যাত লেখিকা হেলেন কিলার ৮৭ বছর বয়সে মারা যান।
ভাগ্য তাদের হারাতে চাইলেও তারা হারেননি। সংগ্রাম করে গেছেন অকাল্ত তাই তারা পৃথিবীর বূকের উজ্জল নক্ষত্র।
জান্নাত শেখ/এভ
Comments
Post a Comment