বাংলাদেশের উজ্জল নক্ষত্র যারা অসময়ে পরোলোক গমন করেন





মৃত্যু একটি চিরন্তন সত্য। এটাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। কালে কালে অনেক নক্ষত্র ঝড়ে পড়েছে আমাদের সিনেমা ইন্ড্রাস্টি থেকে। তাঁরা মরে মরেনি। চিরকাল বেঁচে আছেন তাদের ভক্তদের মাঝে। এমন অনেক নক্ষত্র অকালে ঝড়ে পড়েছে। তাদের কেউ দূর্ঘটনায় পড়ে বা কাউকে সময় কেড়ে নিয়েছে। অনেকেই আছেন যারা নিজের ক্যারিয়ার শুরু করার খুব অল্প সময় পরপরই পরলোক গমন করেন। আজ আমরা কিছু নক্ষত্র  সম্পর্কে কথা বলব।



জহির রায়হান






জহির রায়হান বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক,উপন্যাস লেখক ও গল্প লেখক ছিলেন।  তিনি ব্যক্তিগত জীবনে দুই বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।তার জীবন ক্ষুদ্র ছিল কিছু ।তাঁর অবদান ছিল অতুলনীয়। তিনি ছিলেন কালজয়ী। তিনি ১৯৩৫ সালে ১৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এই ক্ষুদ্র জীবনে নানা পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭২ সালে তাকে একাডেমী পুরস্কার দেয়া হয়। তাঁর লিখিত অনন্যা  বই হচ্ছে  শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে,আরেক ফাল্গুন ইত্যাদি। ১৯৫৬ সালে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। ১৯৬১
সালে তার প্রথম চলচ্চিত্র কখনো আসেনি মুক্তি পায়।  এরপর একে একে কাজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, জীবন থেকে নেয়া, আনোয়ারা, সঙ্গম এবং বাহানা সহ তাঁর নির্মিত ছবি মুক্তি পেতে থাকে। ১৯৭১ সালে  জহির রায়হান  তারঁ ভাইয়ের খোঁজ করতে গিয়ে  মীরপুরে যান ও সেখান থেকে আর তাঁকে খুজে পাওয়া যায়নি।  ১৯৭২ এর ৩০ জানুয়ারির পর তাঁর আর কোনো খোঁজ কেউ পায়নি।  সেদিন বিহারীরা ও পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশীদের ওপর গুলি চালালে তিনি নিহত হয়েছিল বলে জানা যায়।




সালমান শাহ



সালমান শাহ হল এক অনন্য নাম যার মৃত্যুর ২০ বছর পরেও তিনি বেঁচে আছেন ভক্তদের  অন্তরে। তিনি ১৯৭১সালে সেপ্টেম্বরে ১৯ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আসল নাম শাহরিয়ার ইমন।  টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। আস্তে আস্তে তিনি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।  ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। তাঁর সকল ছবিও ছিল ব্যবসা সফল। তাঁর ছবিগুলো বেশ সাড়া ফেলেছিল।  তিনি ১৯৯৬ সালের ৬ ই সেপ্টেম্বর অকালে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু বহন করেন।




জাফর ইকবাল



তিনি একজন জনপ্রিয় অভিনেতা ও গায়ক ছিলেন তিনি ১৯৫০ সালে ২৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। তিনি চিরসবুজ নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান। তিনি অভিনেতার সাথে সাথে খুব ভাল একজন গায়কও ছিলেন। তাঁর প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র ছিল আপন পর। সব মিলিয়ে তিনি ১৫০ টি চলচ্চিত্র করেন।
সুরকার আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অনেক ছবির আবহসংগীত তৈরি করিয়েছেন।তার সেই সকল  ছবিগুলোও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।


পরিবারের অশান্তির কারনে জাফর ইকবাল মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলেন। এরপর  মদ পানসহ অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে তিনি ক্যান্সারে  থাবায় আক্রান্ত হন। তার হার্ট এবং কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। ২৭ এপ্রিল ১৯৯১ সালে তিনি পরোলোক গমন করেন।


আবুল খায়ের জসিম উদ্দিন




তিনি একজন অভিনেতা, প্রযোজক সহ একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালে ১৪ই আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭২ সালে দেবর চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নিজের চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেন। তাঁর জুটি শাবানা ও রোজিনার সাথে বেশ জনপ্রিয় ছিল। তিনি দোস্ত ও দুশমন চলচ্চিত্র খলনায়কের অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দর্শক তাঁকে নায়ক হিসেবে প্রধান্য দেয়। সবুজ সাথী চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম প্রধান  চরিত্রে আখ্যায়িত হন। এরপর একের পর এক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র দিয়ে গেছেন। তিনি নায়িকা সুচরিতার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন।


তিনি  ১৯৯৮ সালের ৮ই অক্টোবর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন । জসিমের মৃত্যুর পর এফডিসিতে তাঁর নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছিল।


সৈয়দ মোহাম্মদ আসলাম তালুকদার(মান্না) :



 আমরা তাঁকে মান্না নামে চিনে থাকি। তিনি একজন অভিনেতা ও প্রযোজক ছিলেন।
তিনি ১৯৬৪ সালে ৬ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বীর সৈনিক চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অনিনেতা বিভাগে জাতীয় পুরষ্কার লাভ করেন। তাঁর অভিনীত আম্মাজান চলচ্চিত্র একটি ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র ছিল বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে ছিল। তিনি আট বার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন কিন্তু তিন বার সেই পুরস্কার লাভ করেন।
নায়ক রাজ রাজ্জাকের হাত ধরে মান্নার চলচ্চিত্র জীবন শুরু হয়। তাঁর প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র  ছিল তওবা। এর তিনি একের পর এক ব্যবসা সাফল্য দিয়ে গেছেন।


২০০৮সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে  হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তিনি  মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার জানাজা এফডিসিতে হয়।  টাঙ্গাইল জেলায় অবস্থিত তার নিজ গ্রাম এলেঙ্গায়, এই মহান নায়ককে কবর স্থাপিত হয়।

Comments

Popular posts from this blog

Computer

লন টেনিস

মহাস্থানগড়